Friday, October 19, 2018

পেরিফাইটন বেইজড পদ্ধতিতে মাছ চাষ


পেরিফাইটন কিঃ   পেরিফাইটন হচ্ছে একধরনের শৈবাল যা মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়, বিভিন্ন জলজ জীব-অনুজীবের জটিল মিশ্রণ, যারা জলাশয়ের পানিতে অবস্খিত কোনো সাবস্ট্রেটের ওপর লেগে থাকে। এসব জীব-অনুজীবের মধ্যে রয়েছেন্ধ ব্যাকটেরিয়া, এককোষী প্রাণী, ছত্রাক, ফাইটোপ্ল্যাংটন, জুপ্ল্যাংটনসহ বিভিন্ন তলদেশীয় প্রাণী। সাবস্ট্রেটের গায়ে অবস্খানরত এসব অনুজীব মাছ ও চিংড়িজাতীয় প্রাণীর খুবই প্রিয় খাবার। পেরিফাইটন বিভিন্ন মৎস্যকুলকে শুধু আকৃষ্টই করে না বরং এসব অনুজীব মাছ ও চিংড়ি জাতীয় প্রাণীর খুবই প্রিয় এবং পুষ্টিকর খাবারও বটে।




পেরিফাইটন পদ্ধতিতে কোনো কোনো মাছের প্রজাতি চাষের জন্য উপযুক্তঃ 

সাধারণত যেসব মাছ গ্রেজিং বা চেঁছে খাবার খায় তারা পেরিফাইটন পদ্ধতিতে চাষের জন্য খুবই ভালো। আমাদের দেশী প্রজাতির মধ্যে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউসসহ তেলাপিয়া ও চিংড়ি এ পদ্ধতিতে চাষের জন্য উপযোগী। এছাড়া সাবস্ট্রেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জলাশয়ের পানিতে বাঁশ বা গাছের ডাল প্রভৃতি সাবস্ট্রেট হিসেবে ব্যবহার করা যায়। হিজল ডাল সাবস্ট্রেট হিসেবে খুবই ভালো। তবে বাঁশের কঞ্চি, পাট খড়ি, গ্লাস রড, প্লাসটিক দণ্ডও সাবস্ট্রেট হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
কোন মাছ এ পদ্ধতিতে চাষের উপযোগীসাধারণত যেসব মাছ গ্রেজিং বা কোনো কিছুর সঙ্গে লেগে থাকা খাবার চেঁচে খায় সেসব মাছই পেরিফাইটন পদ্ধতিতে চাষের জন্য উপযোগী। 

দেশীয় ওই ধরনের মৎস্য প্রজাতির মধ্যে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউসসহ তেলাপিয়া ও চিংড়ি পেরিফাইটন পদ্ধতিতে চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। গবেষণায় আরো দেখা গেছে, আমাদের দেশে সাধারণত গৃহস্খালি পুকুরগুলো এমনিতেই ফেলে রাখা হয়, সেখানে মাছ ছাড়া হলেও মাছের বৃদ্ধি হয় খুবই কম। এ ক্ষেত্রে সেখানে পেরিফাইটন পদ্ধতিতে তথা সাবস্ট্রেট ব্যবহার করে সহজেই মাছের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।

চাষ পদ্দতিঃ   পেরিফাইটন একধরনের শৈবাল হলেও সাধারণ পানিতে এবং সব পরিবেশে এটা জন্মায় না। সাবস্ট্রেট বা ভিত্তিমূলের ওপর পেরিফাইটন জন্মে থাকে। এ ক্ষেত্রে হিজল ডাল সবচেয়ে উপযোগী। তবে বাঁশ, কঞ্চি, শেওড়া ইত্যাদি গাছের ডাল এমনকি পাটের খড়ি, গ্লাস রড, প্লাস্টিক দণ্ডও ব্যবহার করা যেতে পারে। এসব ডালপালা পুকুরজুড়ে পুঁতে রাখলে তাতেই ওই শৈবালজাতীয় জুপ্লাংকটন বা ফাইটোপ্লাংকটন জন্মে থাকে এবং সবুজাভ রঙের একটি আস্তরণ পড়ে। 

এ ছাড়া অন্যান্য প্রাণিজ খাবারও তৈরি হয়। ওই সব ডালপালার ওপর জন্মানো আস্তরণ বা শৈবালই পেরিফাইটন, যা মাছের প্রিয় খাবার। খাবার প্রয়োগের বাড়তি খরচ লাগে না বিধায় খামারিদের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক। একই পুকুরে একই বাঁশ বা কঞ্চি প্রায় তিন বছর ব্যবহার করা যায়।



এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে মাছের বৃদ্ধির তুলনায় পেরিফাইটন প্রযুক্তিটি অত্যন্ত পরিবেশবান্ধবও বটে। পলিকালচার বা মিশ্র চাষের (একই সাথে একাধিক প্রজাতির চাষ) ক্ষেত্রে সাবস্ট্রেট ব্যবহার করে তথা পেরিফাইটন পদ্ধতিতে প্রায় তিন গুণ উৎপাদন পাওয়া সম্ভব। তবে রুই-কাতলা মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে, রুই ৬০ শতাংশ ও কাতলা ৪০ শতাংশ হওয়া ভালো। এ ছাড়া তেলাপিয়া-চিংড়ি মিশ্রচাষেও ভালো উৎপাদন পাওয়া গেছে।

পুষ্টিমান পুকুরে পুঁতে রাখা গাছের ডালপালার ওপর জন্মানো পেরিফাইটনের পুষ্টিমান প্রচলিত পদ্ধতিতে মৎস্য খামারে প্রয়োগকৃত সার বা গৃহস্থালির কুঁড়াজাতীয় খাবারের তুলনায় প্রায় দুই থেকে তিনগুণ। সরবরাহকৃত খাদ্য ব্যবহার করে আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে রুই মাছের মনোকালচারের (এক প্রজাতির চাষ) ক্ষেত্রে উৎপাদন পাওয়া গেছে হেক্টরপ্রতি এক হাজার কেজি। অপরদিকে পেরিফাইটন পদ্ধতিতে একই পুকুরে ওই মাছের উৎপাদন হেক্টরপ্রতি এক হাজার ৯০০ কেজি পাওয়া গেছে। 

অন্যদিকে পলিকালচার বা মিশ্রচাষের (একই সঙ্গে একাধিক প্রজাতির চাষ) ক্ষেত্রে পেরিফাইটন পদ্ধতিতে প্রায় তিনগুণ উৎপাদন পাওয়া গেছে। রুই-কাতলা মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে, রুই শতকরা ৬০ ভাগ ও কাতলা শতকরা ৪০ ভাগ হওয়া ভালো। এ ছাড়া তেলাপিয়া-চিংড়ি মিশ্রচাষে ১৪৫ দিনে সর্বোচ্চ মোট উৎপাদন হেক্টরপ্রতি দুই হাজার ৪৪৫ কেজি তেলাপিয়া এবং ১৪১ কেজি চিংড়ি পাওয়া গেছে।


পেরিফাইটন বেইজ একোয়াকালচার পদ্ধতিতে কার্প জাতীয় মাছের মিশ্র চাষঃ 
পেরিফাইটন বেইজ অ্যাকোয়াকালচার পদ্ধতি ব্যবহার করে সম্পূর্ণ ফ্রি খাবার খাইয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে কার্প জাতীয় মাছের মিশ্র চাষ করা যায় । এই পদ্ধতিটি হল মাছ চাষের একটি অরগানিক পদ্ধতি । এখানে কোন ধরনের সম্পূরক খাদ্য মাছের জন্য দেয়া হয় না। মাছের জন্য প্রয়োজনীয় শতভাগ খাবার পুকুরের মধ্যেই উৎপাদন করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে এই পদ্ধতিতে চাষ করে স্বাভাবিকের চেয়ে সর্বোচ্চ ৬ গুন পর্যন্ত বেশি উৎপাদন পাওয়া যায়।

পেরিফাইটন বেইজ অ্যাকোয়াকালচার পদ্ধতি কিভাবে কাজ করেঃ 
এই পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ পুকুরে কাঠ, বাঁশ বা প্লাস্টিকের দ্বারা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ দূরত্ব বজায় রেখে পানিতে বাধা সৃষ্টি করা হয়। এরপর পুকুরে জৈব সার প্রয়োগ করলে পুকুরে প্রাকৃতিক উপায়েই পেরিফাইটন জন্ম নেয় । পানির মধ্যে থাকা বাঁশের সাথে এই পেরিফাইটন গুলো লেগে আটকে থাকে। আর মাছ খাবার হিসেবে এগুলোকে সরাসরি গ্ৰহন করে। পরিফাইটন গুলো সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি হ়ওয়ায় এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত খাবার মাছ খুব পছন্দ করে খায়। এই খাবার এর গুনগত মান বেশ ভালো আর তাই মাছের বৃদ্ধি খুব দ্রুত হয় ।




পেরিফাইটন বেইজ অ্যাকোয়াকালচার পদ্ধতিতে মাছের প্রজাতি নির্বাচনঃ 
এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলে কার্প জাতীয় মাছের মধ্যে সবচেয়ে ভালো উৎপাদন আসে কাতলা, রুই, ও কালবাউস মাছের ক্ষেত্রে।

পেরিফাইটন পদ্ধতিতে মাছের বেঁচে থাকার হারঃ 
রুই মাছের সারভাইবল রেট ৬০%
কাতলার সারভাইবল রেট ৯০ %
কালবাউস মাছের ক্ষেত্রে ৮৫ %







No comments:

Post a Comment

মৎস্য চাষে Probiotic কেন ব্যাবহার করবেন

Application & Benefits of Probiotic in Aquaculture The word Probiotic was first introduced by to describe “substances secreted ...