ছাদের টবে ফল গাছ রোপন
আঙ্গুর চাষ
ছাদে ফল গাছ রোপনের কৌশল কি হবে বা কি ফলগাছ রোপন
করলে সহজেই সফল হওয়া যাবে।
১–
ছাদে রোপনের
জন্য যে ফল গাছই পছন্দ করেনন না কেন তার চারা হতে হবে কাটিং, বাডিং, গ্রাফটিং(ক্লেপ্ট, ভিনিয়ার, কনটাক্ট) বা গুটি কলমের যেন বছর না
ঘুরতেই তাতে ফল পাওয়া যায়।
বীজের চারার ফিজিওলোজিক্যাল ম্যাচুরিটি আসতে দেরি হয়, অনেক বেশি দিন টবে লালন পালন করতে হয়, যা টবে সীমিত পরিসর থেকে খাদ্য সরবরাহ অসম্ভব হয়।যেমন- কদবেল গাছের বীজের চারা রোপন করলে ৮/১০ বছর ফল ধরতে সময় নিবে কিন্তু ঐ গাছের একটা ক্লেপ্ট কলম চারা রোপন করলে হয়তো পর বছরই ফল পাওয়া অসম্ভব কিছু নয়।
বীজের চারার ফিজিওলোজিক্যাল ম্যাচুরিটি আসতে দেরি হয়, অনেক বেশি দিন টবে লালন পালন করতে হয়, যা টবে সীমিত পরিসর থেকে খাদ্য সরবরাহ অসম্ভব হয়।যেমন- কদবেল গাছের বীজের চারা রোপন করলে ৮/১০ বছর ফল ধরতে সময় নিবে কিন্তু ঐ গাছের একটা ক্লেপ্ট কলম চারা রোপন করলে হয়তো পর বছরই ফল পাওয়া অসম্ভব কিছু নয়।
২–
যদি গ্রাফটিং এর চারা হয় তবে ছাদে রোপনের পূর্বে তার
রুট স্টকের ট্যাপরুট কেটে দিতে হবে। কেননা ট্যাপরুট গাছ কে শুধু মাটিতে আটকে রাখতে
সাহায্য করে এবং বড় টবের/বেশি মাটির চাহিদা দেখায় যা অনেক লম্বা বা বিশাল বড় গাছের
প্রয়োজন হয়, টবের গাছের ক্যানোপি ছোট করে রাখলে শুধু ফিডার
রুট থাকলেই চলে। তা ছাড়া ট্যাপ রুট থাকলে গাছ সোজা উপরদিকে বাড়তে চায়, বা এপিক্যাল ডমিনেন্সি আচরন দেখায় এবং টবের গাছটি খাড়া উপর দিকে বাড়
বাড় বাড়তি হয় যা মোটেই কাংখিত নয়।
৩–
ছাদের ফল গাছে প্রুনিং ট্রেনিং করে ক্যানোপি কমিয়ে
রাখতে হবে এবং গাছের উচ্চতাও কমিয়ে রাখতে হবে।কেনোপি বেশী থাকলে গাছের খাদ্য পানি
বেশী প্রয়োজন হয় যা টবের গাছে সব সময় ঠিক মত সরবরাহ করা যায় না, এতে গাছের ফলের মান এবং গাছের মান কাংখিত হয় না। আবার গাছ যদি বেশী
উচ্চতার হয় তবে ঝড়ো বাতাস মোকাবেলা করতে পারে না। তাই ছাদের টবে গাছ কে সব সময়
ছাটাইয়ের মধ্যে রাখতে হবে। গাছের যে শাঁখাটি কাংক্ষিত উচ্চতা অতিক্রম করবে তাকে
দয়া মায়া না করে তার উৎসে কেটে ফেলতে হবে।
৪—
ছাদের ফল গাছ ক্রমান্বয়ে ছোট টব থেকে বড় টবে
স্থানান্তর করে গাছের স্বাস্থ্য ভাল রাখা দারুন উপায়। প্রথমে ছোট টবে গাছ রোপন করে
দৈহিক বৃদ্ধি ঘটিয়ে ফল ধরার উপযোগী করে নিতে হবে। তার পর ফল ধরার মৌসুমের আগে
সুপ্ত মৌসুমের শুরুতে গাছকে বড় টবে স্থানান্তর করে নিতে হবে। যদি প্রথম থেকেই বড়
টবে রোপন করা হয় তবে প্রথম বছরই সকল খাদ্য নি:শেষ হয়ে যাবে, ফল ধরার সময় খাদ্যাভাব দেখা দিবে, যা বাহির
থেকে সঠিক মাপে সুষম সার সরবরাহ দেয়া কঠিন হবে।
৫—
গাছ আকৃতিতে ছোট এবং প্রাকৃতিক ভাবেই খরা সহ্য করতে
পারে এমন হলে ভাল। যেমন- করমচা, ডালিম, লেবু,
পেয়ারা, ড্রাগন ফল, আনারস ইত্যাদি।এই ধরনের ফল গাছ ঠিকমত ছাঁটাই করতে জানলে খুব সহজেই
কাংখিত আকার দেয়া যায়।
৬—
ছাদের জন্য ফলগাছের সেই জাত বা গাছ পছন্দ করা উচিৎ যে
ফলের গাছ/জাত বছরে একাধিকবার ফল দেয় যেমন – ডালিম, লেবু, সফেদা,বারো মাসি আমড়া,কামরাঙ্গা, দো-ফলা,ত্রি-ফলা আম যেমন বারি-১১,মিক্স স্পেশাল, থাই জাত সুইট কাতিমন
ইত্যাদি।সব সময় গাছে ফল থাকলে গাছের যত্নের প্রতি মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়,
ছাদ বাগানি নিজেই প্রতিদিন ছাদে যাবে।
৭–
বেশী পানি অপচয়কারি গাছ ছাদে রোপন করা যাবে না।যেমন-
কলাগাছ।যে সমস্ত গাছের পাতা বড়,তার প্রস্বেদন হার বেশী,এই জন্যে লতা জাতীয় সবজি শুধু মাত্র বর্ষা, শরৎ
ও হেমন্তে চাষ করা উচিৎ।ছাদের বাগান যদি পরিকল্পিত হয় তবে গাছের জন্য বৃষ্টির পানি
ধরে সংরক্ষণ করতে হবে।
৮–
ছাদের টবের গাছে পানি সেচ সকাল সকাল দিতে হবে যখন টব, টবের মাটি ও পানির তাপমাত্রা প্রায় সমান সমান থাকে।বৃষ্টি বাদলের দিনেও
সকাল সকাল টবে জমে থাকা পানি ফেলে দিতে হবে।
৯–
ছাদের টবের গাছে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করার প্রয়োজন
হলে টবের মাটিকে জো অবস্থায় রেখে গাছের গোড়া থেকে দূরবর্তী টবের গা ঘেঁসে দিতে হবে, সার প্রয়োগের পরপর পানি সেচ দেয়া যাবে না।অতএব যেদিন সার প্রয়োগ হবে
সেদিন সকালে বেশী করে পানি দিতে হবে যেনো বিকাল বেলা বা পর দিন সকাল পর্যন্ত মাটি
জো অবস্থায় থাকে।
১০–
ফল গাছের টব সরাসরি ছাদের উপর রাখা যাবেনা। এতে ছাদের
তাপ শোষন করে আপনার গাছের টব উত্তপ্ত হবে, গাছের শিকড় তথা গাছের
ক্ষতি হবে।টবটি এক্সট্রা ইট বা কাঠের তক্তার উপর রাখতে হবে।
আঙ্গুর চাষ
আঙ্গুর চাষের জন্য জমি ও মাটি নির্বাচন দো-আঁশযুক্ত লালমাটি, জৈবিক সার সমৃদ্ধ কাঁকর জাতীয় মাটি এবং পাহাড়ের পাললিক মাটিতে আঙ্গুর
চাষ ভাল হয়। জমি অবশ্যই উঁচু হতে হবে যেখানে পানি দাঁড়িয়ে থাকবে না এবং প্রচুর
সূর্যের আলো পড়বে এমন জায়গা আঙ্গুর চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে।
জমি তৈরি কিভাবে করবেন
ভালভাবে চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুর করবেন তারপর ৭০ × ৭০ × ৭০ সে. মি. মাপের গর্ত করে তাতে ৪০ কেজি গোবর, ৪০০ গ্রাম পটাশ, ৫০০ গ্রাম ফসফেট এবং ১০০ গ্রাম ইউরিয়া গর্তের মাটির সাথে মিশিয়ে ১০/১৫ দিন রেখো দিতে হবে যেন সারগুলো ভালোভাবে মাটির সাথে মিশে যায়। তারপর সংগ্রহীত চারা গোড়ার মাটির বলসহ গর্তে রোপন করে একটি কাঠি গেড়ে সোজা হয়ে ওঠার সুযোগ করে দিতে হবে এবং হালকা পানি সেচ দিতে হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আঙ্গুর চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় মার্চ-এপ্রিল মাস।
ভালভাবে চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুর করবেন তারপর ৭০ × ৭০ × ৭০ সে. মি. মাপের গর্ত করে তাতে ৪০ কেজি গোবর, ৪০০ গ্রাম পটাশ, ৫০০ গ্রাম ফসফেট এবং ১০০ গ্রাম ইউরিয়া গর্তের মাটির সাথে মিশিয়ে ১০/১৫ দিন রেখো দিতে হবে যেন সারগুলো ভালোভাবে মাটির সাথে মিশে যায়। তারপর সংগ্রহীত চারা গোড়ার মাটির বলসহ গর্তে রোপন করে একটি কাঠি গেড়ে সোজা হয়ে ওঠার সুযোগ করে দিতে হবে এবং হালকা পানি সেচ দিতে হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আঙ্গুর চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় মার্চ-এপ্রিল মাস।
কখন সার প্রয়োগ করবেন আঙ্গুর যেহেতু লতানো গাছ তাই এর বৃদ্ধির
জন্য সময়মতো বাড়তি সার প্রয়োগ করতে হবে। রোপনের ১ মাসের মধ্যে বাড়বাড়তি না
হলে গোড়ার মাটি আলগা করে তাতে ৫ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করা দরকার। ১-৩
বছরের প্রতিটি গাছে বছরে ১০ কেজি গোবর, ৪০০ গ্রাম পটাশ,
৫০০ গ্রাম ফসফেট এবং ১০০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। পটাশ
সার ব্যবহারে আঙ্গুর মিষ্টি হয় এবং রোগ বালাইয়ের উপদ্রব কম হয়। গাছ বেড়ে ওঠার
জন্য গাছের গোড়ায় শক্ত কাঠি দিতে হবে এবং মাচার ব্যবস্থা করতে হবে- সে মাচাতে
আঙ্গুরের শাখা-প্রশাখা ছড়াবে।
গাছের কান্ড ছাঁটাই রোপনের পরবর্তী বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে মাচায়
ছড়িয়ে থাকা আঙ্গুর গাছের কান্ড ছাঁটাই করতে হবে। অধিকাংশ খামারিরই প্রশ্ন গাছে
ফুল হয় কিন্তু ফল হয় না। এর কারণ কি? কান্ড ছাঁটাই -এর
মাধমে আঙ্গুর গাছের ফলন বৃদ্ধি হয় এবং ফুল ঝরে পড়া কমে যায়। ছাঁটাইয়ের ৭ দিন
আগে এবং পরে গোড়ায় হালকা সেচ দিতে হয়। গাছ রোপনের পর মাচার ওঠা পর্যন্ত প্রধান
কান্ড ছাড়া অন্য সকল পার্শ্বের শাখা ভেঙ্গে ফেলতে হবে।
প্রথম ছাঁটাই মাচায় কান্ড ওঠার ৩৫/৪৫ সে.মি. পর প্রধান কান্ডের
শীর্ষদেশ কেটে দিতে হবে যাতে ঐ কান্ডের দুই দিক থেকে দুটি করে চারটি শাখা গজায়।
দ্বিতীয় ছাঁটাই গজানো চারটি শাখা বড় হয়ে ১৫-২০ দিনের মাথায়
৪৫/৬০ সে.মি. লম্বা হবে তখন ৪টি শীর্ষদেশ কেটে দিতে হবে যেখানে থেকে আরও পূর্বের
ন্যায় দুটি করে ১৬টি প্রশাখা গজাবে।
তৃতীয় ছাঁটাই এই ১৬টি প্রশাখা ১৫/২০ দিনের মাথায় ৪৫/৬০ সে.মি.
লম্বা হবে তখন আবার এদের শীর্ষদেশ কেটে দিতে হবে যাতে প্রতিটি প্রশাখরে দুদিকে
দুটি করে ৪টি নতুন শাখা এবং এমনিভাবে ১৬টি শাখা থেকে সর্বমোট ৬৪টি শাখা গজাবে।
অবশ্য সর্বক্ষেত্রেই যে ৬৪টি শাখা গজাবে এমন কোনো কথা নেই।
এই শাখার গিরার মধ্যেই
প্রথমে ফুল এবং পরে এই ফুলমটর দানার মত আকার ধারণ করে আঙ্গুল ফরে রূপান্তরিত হবে।
প্রথম বছর ফল পাবার পর শাখাগুলোকে ১৫/২০ সে.মি. লম্বা রেখে ফেব্রুয়ারী মাসে ছেঁটে
দিতে হবে ফলে বসন্তের পক্কালে নতুন নতুন শাখা গজাবে এবং ফুল ধরবে। এই পদ্ধতি ৩/৪
বছর পর্যন্ত চলবে এবং ফলের স্থিতি লাভ করবে।
পরিমিত সার এবং উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে একটি আঙ্গুর গাছ না হলেও
৩০ বছর ফলন দিতে পারে। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে প্রতি একরে ৪৩৬টি আঙ্গুর গাছে লাগানো
যায় এবং জাতিতে ভিন্নতায় গড়ে প্রতি গাছে প্রতিবছর ৪ কেজি হিসাবে মোট ১৭৪৪ কেজি
আঙ্গুর এক একরে উৎপাদন করা সম্ভব।
একটি হিসাব করে দেখা গেছে, কৃষকের বসত ভিটার ৯
বর্গমিটার জায়গায় ৪টি গাছ লাগিয়ে বছরে সর্বোচ্চ তিনটি ফলনের মাধ্যমে ১৬ কেজি
আঙ্গুর উৎপাদন করা সম্ভব। লাউ, সীম, কুমড়া এখন বসত ভিটার আঙ্গিনা থেকে বাণিজ্যিকভাবে মাঠ পর্যায়ে চাষ
হচ্ছে, অতএব বসত ভিটার ঐ মাচাটি এখন চাইলে আমরা আঙ্গুর
মাচায় রূপান্তরিত করতে পারি। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন হচ্ছে কৃষক পর্যায়ে প্রশিক্ষণ,
প্রদর্শনী খামার স্থাপন, চারা উৎপাদন,
বিতরণ এবং জোর প্রচারণা।
আঙুরগাছের পরিচর্যাঃ
আঙুরগাছের ডাল সময়মতো ও সঠিকভাবে ছাঁটাই না করলে ফুল-ফল ধরে না।
আঙুরগাছের বিভিন্ন পরিচর্যার মধ্যে একটি হলো ডাল ছাঁটাই। এই গাছের ডাল বা শাখায়
ফুল ধরে। তাই এটা না করলে ফলন অর্ধেকে নেমে যায়। প্রতিবার ফুল ধরার পর ডাল বা
শাখাটি পুরনো হয়ে যায় এবং ওই ডাল বা শাখায় আর ফুল-ফল ধরে না। এসব পুরনো ডাল বা
শাখা গাছে থাকলে খাবারে ভাগ বসায় এবং গাছে নতুন শাখা-প্রশাখা গজাতে বাধা দেয়।
শীত আসার সাথে
সাথেই আঙুরের পাতা ঝরে যায়। পুরো শীতে গাছ পাতাবিহীন অবস্খায় থাকে। শুধু কাণ্ড ও
শাখা-প্রশাখা দেখে মনে হয় যেন গাছটি মরে গেছে। কিন্তু বসন্ত শুরু হওয়ার পর আঙুর
গাছে ফুল-ফল ধরতে শুরু করে। তবে ফল পাকতে পাকতে বর্ষা চলে এলে ফল মিষ্টি হয় না।
ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ চাষঃ
ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ বেগুন পরিবারের ফসল।
বাংলাদেশে এর ব্যবহার কম হলেও একটি গুরুত্বপূর্ণ সবজি। এর উৎপত্তি স্থল হলো দক্ষিণ আমেরিকার নিরক্ষীয় অঞ্চল। ধারণা করা হয়ে থাকে ব্রাজিল মিষ্টি মরিচের উৎপত্তিস্থান। বিশ্বে আবাদকৃত সব মরিচই একই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত যার মধ্যে ১১টি গ্রুপ রয়েছে এবং ঝালবিহীন ও ঝাল মরিচ হিসেবে বিভক্ত করা হয়েছে। মিষ্টি মরিচের ফলের আকার ও আকৃতি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে, তবে সাধারণত ফল গোলাকার ও ত্বক পুরু হয়।
আমাদের দেশে আবাদকৃত জাতগুলোর মধ্যে প্রধান হচ্ছে
California Wonder, Tender Bell (F1)এবং Yellow Wonder ইত্যাদি । প্রতি বছর এগুলোর বীজ আমদানি করতে হয়। তবে আমাদের দেশে California Wonder এর বীজ উৎপাদন করার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
জীবন কাল: জাত ও মৌসুমভেদে মিষ্টি মরিচের জীবনকাল ১২০ থেকে ১৪০ দিন পর্যন্ত হয়ে থাকে।
বীজ বপনের সময়: অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস।
বীজের মাত্রা: প্রতি হেক্টরে ৩০ হাজার চারার জন্য প্রায় ২৩০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয় ।
মিষ্টি মরিচ আমাদের দেশীয় প্রচলিত সবজি না হলেও অতি সম্প্রতি এর চাষ এ দেশে প্রসারিত হচ্ছে বিশেষ করে বড় বড় শহরের আশপাশে সীমিত পরিসরে কৃষকরা এর চাষ করে থাকে, যা অভিজাত হোটেল ও বিভিন্ন সুপার মার্কেটে বিক্রি হয়ে থাকে। মিষ্টি মরিচের রপ্তানি সম্ভাবনাও প্রচুর। বিশ্বে অনেক দেশেই মিষ্টি মরিচ একটি জনপ্রিয় সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশ্বে টমেটোর পরে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সবজি হচ্ছে মিষ্টি মরিচ। এর বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে যেমন পাতা সালাদ অথবা স্যুপ তৈরিতে ব্যবহার হয়, কাঁচা ফল সালাত এবং রান্না করে সবজি হিসেবে অতি সুস্বাদু খাদ্য। পুষ্টিমানের দিক থেকে মিষ্টি মরিচ একটি অত্যন্ত মূল্যবান সবজি। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকার কারণে এবং টবে চাষের উপযোগী বলে দেশের জনসাধারণকে মিষ্টি মরিচ খাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে।
ক্যাপসিকামের উপকারিতাঃ
১। ক্যান্সার প্রতিরোধ করঃ ক্যাপসিকামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে বিশেষভাবে সহায়ক। ক্যাপসিকামে রয়েছে সালফার কম্পাউন্ড যা গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার এবং এসোফেগাল ক্যান্সার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে।
২। দৃষ্টিশক্তির সমস্যা দূর করেঃ ক্যাপসিকামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি এবং বেটা ক্যারোটিন যা দৃষ্টিশক্তি সংক্রান্ত নানা সমস্যা দূর করে এবং দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।
৩। ওজন কমায়ঃ ক্যাপসিকামের অ্যাক্টিভেটিং থার্মোজেনেসিস এবং হজম শক্তি উন্নত করার ক্ষমতা দ্রুত ওজন কমাতে সহায়ক।
৪। কার্ডিওভ্যস্কুলার সমস্যা দূর করেঃ ক্যাপসিকামে রয়েছে লাইকোপেন না কার্ডিওভ্যস্কুলার নানা সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে এবং হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও বিশেষভাবে সহায়ক ক্যাপসিকাম।
৫। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ ক্যাপসিকামের ভিটামিন সি এবং কে দেহের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে। এতে করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় অনেকাংশে, যার ফলে ছোটোখাটো নানা রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হয়।
৬। দেহে আয়রনের অভাব সংক্রান্ত সমস্যা কমায়ঃ ক্যাপসিকামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি দেহে আয়রন শোষণে সহায়তা করে। এতে দেহে আয়রনের অভাব জনিত সমস্যা দূর হয়।
৭। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা কমায়ঃ ক্যাপসিকামের ক্যাপসাইসিন উচ্চ রক্ত চাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রনে রাখতে সহায়তা করে।
৮। হজম সংক্রান্ত নানা সমস্যা দূর করেঃ পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে ক্যাপসিকামের জুস হজম সংক্রান্ত নানা সমস্যা ও পেটের পীড়া জনিত রোগ যেমন গ্যাস হওয়া, ডায়রিয়া, ডিসপেপসিয়া ইত্যাদি দূর করতে সহায়তা করে।
২। দৃষ্টিশক্তির সমস্যা দূর করেঃ ক্যাপসিকামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি এবং বেটা ক্যারোটিন যা দৃষ্টিশক্তি সংক্রান্ত নানা সমস্যা দূর করে এবং দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।
৩। ওজন কমায়ঃ ক্যাপসিকামের অ্যাক্টিভেটিং থার্মোজেনেসিস এবং হজম শক্তি উন্নত করার ক্ষমতা দ্রুত ওজন কমাতে সহায়ক।
৪। কার্ডিওভ্যস্কুলার সমস্যা দূর করেঃ ক্যাপসিকামে রয়েছে লাইকোপেন না কার্ডিওভ্যস্কুলার নানা সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে এবং হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও বিশেষভাবে সহায়ক ক্যাপসিকাম।
৫। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ ক্যাপসিকামের ভিটামিন সি এবং কে দেহের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে। এতে করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় অনেকাংশে, যার ফলে ছোটোখাটো নানা রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হয়।
৬। দেহে আয়রনের অভাব সংক্রান্ত সমস্যা কমায়ঃ ক্যাপসিকামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি দেহে আয়রন শোষণে সহায়তা করে। এতে দেহে আয়রনের অভাব জনিত সমস্যা দূর হয়।
৭। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা কমায়ঃ ক্যাপসিকামের ক্যাপসাইসিন উচ্চ রক্ত চাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রনে রাখতে সহায়তা করে।
৮। হজম সংক্রান্ত নানা সমস্যা দূর করেঃ পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে ক্যাপসিকামের জুস হজম সংক্রান্ত নানা সমস্যা ও পেটের পীড়া জনিত রোগ যেমন গ্যাস হওয়া, ডায়রিয়া, ডিসপেপসিয়া ইত্যাদি দূর করতে সহায়তা করে।
৯। ত্বক পরিষ্কার রাখতে ক্যাপসিকাম বেশ উপকারী, এটি ত্বকের র্যাশ হওয়া ও ব্রণ প্রতিরোধ করে।
১০। এর ভিটামিন-সি মস্তিষ্কের টিস্যুকে পুনরুজ্জীবিত করে; দেহের হাড়কে সুগঠিত করে।
১১। ক্যাপসিকাম যেকোনো ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়। মাইগ্রেন, সাইনাস, ইনফেকশন, দাঁতে ব্যথা, অস্টিওআর্থ্রাইটিস ইত্যাদি ব্যথা দূর করতে কাজ করে।
চাষাবাদ ও উৎপাদন কলাকৌশলঃ
জলবায়ু ও মাটিঃ ক্যাপসিকাম উৎপাদনের জন্য ১৬০-২৫০সে. তাপমাত্রা ও শুষ্ক পরিবেশ সবচেয়ে উপযোগী। রাতের তাপমাত্রা ১৬০- ২১০সে. এর কম বা বেশি হলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, ফুল ঝরে পড়ে, ফলন ও মান কমে যায়, কোন কোন ক্ষেত্রে একেবারেই ফলন হয় না। অক্টোবর মাসে বীজ বপন করে নভেম্বরে চারা রোপণ করলে দেখা যায় যে, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত রাতের তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে গাছের দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এ জন্য গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য পলিথিন ছাউনি, পলি হাউস, পলিভিনাইল হাউসে গাছ লাগালে রাতে ভিতরের তাপমাত্রা বাইরে অপেক্ষা বেশি থাকে। উন্নত বিশ্বে যেমন- জাপান, আমেরিকা, বৃটেন, নেদারল্যান্ড, তাইওয়ান প্রভৃতি দেশে গ্রিন হাউস গ্লাস হাউস, পলি হাউস ইত্যাদির মাধ্যমে তাপমাত্রা ও আলো নিয়ন্ত্রণ করে বছরব্যাপী লাভজনকভাবে ক্যাপসিকাম চাষ করছে। এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও একই পদ্ধতি গ্রহণ করে প্রচুর ক্যাপসিকামের চাষ হচ্ছে। ফুল এবং ফল ধারণ দিবস দৈর্ঘ্য দ্বারা প্রভাবিত হয় না। কিন্তু আলোক তীব্রতা এবং আর্দ্রতা ফল ধারণে প্রভাব ফেলে। সুনিষ্কাশিত দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি মিষ্টি মরিচ চাষের জন্য উত্তম। মিষ্টি মরিচ খরা এবং জলাবদ্ধতা কোনোটিই সহ্য করতে পারে না। মিষ্টি মরিচের জন্য মাটির অম্ল ক্ষারত্ব ৫.৫-৭.০ এর মধ্যে হওয়া বাঞ্ছনীয়।
চারা উৎপাদনঃ
প্রথমে বীজগুলো ১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সুনিষ্কাশিত উঁচু বীজতলায় মাটি মিহি করে ১০x২ সে.মি. দূরে দূরে বীজ বপন করে হালকাভাবে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। বীজতলায় প্রয়োজনানুসারে ঝাঝরি দিয়ে হালকাভাবে সেচ দিতে হবে। বীজ গজাতে ৩-৪ দিন সময় লাগে। বীজ বপনের ৭-১০দিন পর চারা ৩-৪ পাতা বিশিষ্ট হলে ৯-১২ সে.মি. আকারের পলি ব্যাগে স্থানান্তর করতে হবে। পটিং মিডিয়াতে ৩:১:১ অনুপাতে যথাক্রমে মাটি, কম্পোস্ট এবং বালি মিশাতে হবে। পরে পলিব্যাগ ছায়াযুক্ত স্থানে স্থানান্তর করতে হবে, যাতে প্রখর সূর্যালোকে এবং ঝড় বৃষ্টি আঘাত হানতে না পারে। উল্লেখ্য যে, অক্টোবর মাস হচ্ছে বীজ বপনের উত্তম সময়।
জমি তৈরি, সার প্রয়োগ ও চারা রোপণঃ
ভালো ভাবে চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে যাতে জমিতে বড় বড় ঢিলা এবং আগাছা না থাকে। মিষ্টি মরিচ চাষে প্রতি শতাংশে গোবর ৪০ কেজি, ইউরিয়া ১ কেজি, টিএসপি ১.৪ কেজি, এমপি ১ কেজি, জিপসাম ৪৫০ গ্রাম এবং জিংক অক্সাইড ২০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। জমি তৈরির সময় অর্ধেক গোবর সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক গোবর, টিএসপি, জিংক অক্সাইড, জিপসাম, ১/৩ ভাগ এমপি এবং ১/৩ ভাগ ইউরিয়া চারা রোপণের গর্তে প্রয়োগ করতে হবে। বাকি ২/৩ ভাগ ইউরিয়া এবং এমপি পরবর্তীতে দুই ভাগ করে চারা লাগানোর যথাক্রমে ২৫ এবং ৫০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে। চারার রোপণ দূরত্ব জাতভেদে ভিন্নতর হয়। সাধারণত ৩০ দিন বয়সের চারা ৪৫x৪৫ সে. মি. দূরত্বে রোপণ করা হয়। মাঠে চারা লাগানোর জন্য বেড তৈরি করতে হবে। প্রতিটি বেড প্রস্থে ৭৫ সে. মি. হতে হবে এবং লম্বায় দুটি সারিতে ২০টি চারা সংকোলনের জন্য ৯ মিটার বেড হবে। দু’টি সারির মাঝখানে ৩০ সে. মি. ড্রেন করতে হবে। চারা পড়ন্ত বিকেলে রোপণ করা উত্তম । চারা রোপণের পর গাছের গোড়ায় পানি দিতে হবে। প্রতিদিন মাঠ পরিদর্শন করতে হবে। যদি কোনো চারা মারা যায় তাহলে ওই জায়গায় পুনরায় চারা রোপণ করতে হবে। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ হতে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত রাতের তাপমাত্রা অনেক কমে যায় এ সময় গাছের দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় । কাজেই গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য পলিথিন ছাউনিতে গাছ লাগালে রাতে ভেতরের তাপমাত্রা বাইর অপেক্ষা বেশি থাকে এবং গাছের দৈহিক বৃদ্ধি স্বাভাবিক হয়।
অন্যান্য পরিচর্যাঃ
মিষ্টি মরিচ খরা ও জলাবদ্ধাতা কোনোটিই সহ্য করতে পারে না। জমিতে প্রয়োজন মতো সেচ দিতে হবে। আবার অতিরিক্ত সেচ দিলে ঢলে পড়া রোগ দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় সে জন্য সুষ্ঠু নিকাশ ব্যবস্থা করতে হবে। কোনো কোনো জাতে ফল ধরা অবস্থায় খুঁটি দিতে হয় যাতে গাছ ফলের ভারে হেলে না পড়ে। আগাছানাশক বা হাত দিয়ে অথবা নিড়ানি দিয়ে প্রয়োজনীয় আগাছা দমন করতে হবে।
পোকামাকড় ব্যবস্থাপনাঃ
জাবপোকা (এফিড) কারনে ক্ষতির লক্ষণ : প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক জাবপোকা দলবদ্ধভাবে গাছের পাতার রস চুষে খায়। ফলে পাতা বিকৃত হয়ে যায়,বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও প্রায়শ নিচের দিকে কোঁকড়ানো দেখা যায়। জাবপোকার শরীরের পেছন দিকে অবস্থিত দু’টি নল দিয়ে মধুর মতো এক প্রকার রস নিসরণ করে। এই রস পাতা ও কান্ডে আটকে গেলে তাতে সুঁটিমোল্ড নামক এক প্রকার কালো রঙের ছত্রাক জন্মায় এবং তার ফলে গাছের সবুজ অংশ ঢেকে যায় এবং সালোকসংশ্লেষণ ক্রিয়া বিঘ্নিত হয়। মেঘলা, কুয়াশাচ্ছন্ন এবং ঠান্ডা আবহাওয়ায় এর বংশ বৃদ্ধি বেশি হয়। প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হলে এর সংখ্যা কমে যায়।
দমন ব্যবস্থা ১ঃ
প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত পাতা ও ডগার জাবপোকা হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলা যায়। নিম বীজের দ্রবণ (১ কেজি পরিমাণ অর্ধভাঙ্গা নিমবীজ ১০ লিটার পানিতে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে) বা সাবান গোলা পানি (প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২ চা চামচ গুঁড়া সাবান মেশাতে হবে) স্প্রে করেও এ পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কমানো যায়। লেডি বার্ড বিটলের পূর্ণাঙ্গ ও কীড়া এবং সিরফিড্ ফ্লাই এর কীড়া জাবপোকা খেয়ে প্রাকৃতিকভাবে দমন করে। সুতরাং উপরোক্ত বন্ধু পোকা সংরক্ষণ করলে এ পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কম হয়। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে শুধু আক্রান্ত স্থানসমূহে কীটনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি বিষক্রিয়া সম্পন্ন কীটনাশক, যেমন- ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ২ মি. লি. হারে অথবা পিরিমর ৫০ ডিপি প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। মৌমাছি বা পরাগায়নে সাহায্যকারী পোকাদের জন্য অনেকটা নিরাপদ। বিষ প্রয়োগের এক সপ্তাহের মধ্যে খাওয়ার জন্য কোনো ফল সংগ্রহ করা যাবে না।
থ্রিপস পোকায় ক্ষতির লক্ষণ : পূর্ণাঙ্গ ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক থ্রিপস পাতা থেকে রস চুষে খায়। পাতার মধ্যশিরার নিকটবর্তী এলাকা বাদামি রঙ ধারণ করে ও শুকিয়ে যায়। নৌকার খোলের পাতা ওপরের দিকে কুঁকড়িয়ে যায়। গাঢ় বাদামি রঙের পূর্ণাঙ্গ থ্রিপস পোকা খুবই ছোট, সরু ও লম্বাকৃতির। খালি চোখে কোনোমতে এদের দেখা যায়।
দমন ব্যবস্থা ২ঃ
পাঁচ গ্রাম পরিমাণ গুঁড়া সাবান প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে পাতার নিচের দিকে স্প্রে করা। ক্ষেতে সাদা রঙের ৩০ সে.মি. - ৩০ সে.মি. আকারের বোর্ডে পাতলা করে গ্রিজ বা আঠা লাগিয়ে কাঠির সাহায্যে ৩ মিটার দূরে দূরে আঠা ফাঁদ পেতে থ্রিপস পোকা আকৃষ্ট করে মারা। এক কেজি আধা ভাঙা নিমবীজ ১০ লিটার পানিতে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে উক্ত পানি স্প্রে করা। আক্রমণের হার অত্যন্ত বেশি হলে ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি জাতীয় কীটনাশক (প্রতি লিটার পানিতে ২ মি. লি. পরিমাণ) স্প্রে করা।
লালমাকড় (মাইট)- এর কারনে ক্ষতির লক্ষণ : লালমাকড় খাওয়া পাতায় হলুদাভ ছোপ ছোপ দাগের সৃষ্টি হয়। যখন এই ধরনের আক্রমণ পাতার নিচে দিকে মাঝখানে বেশি হয় তখন প্রায় সব ক্ষেত্রেই পাতা কুঁকড়িয়ে যেতে দেখা যায়। ব্যাপক আক্রমণের ফলে সম্পূর্ণ পাতা হলুদ ও বাদামি রঙ ধারণ করে এবং শেষ পর্যন্ত পাতা ঝরে পড়ে। লালমাকড় পাতার নিচের পৃষ্ঠদেশে অত্যন্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ডিম পাড়ে যা খালি চোখে দেখা যায় না। এই ডিম থেকে কমলা রঙের বাচ্চা বের হয়ে বেগুন পাতার নিচের পৃষ্ঠদেশ খেতে থাকে। এক সপ্তাহের মধ্যেই বাচ্চাগুলো গাঢ়-কমলা বা লাল রঙের পূর্ণ মাকড়ে পরিণত হয় যারা দেখতে ক্ষুদ্র মাকড়সার মতো। এদের পাতার নিচের পৃষ্ঠদেশে চলাফেরা করতে দেখা যায়।
দমন ব্যবস্থা ৩ঃ
নিমতেল ৫ মি. লি. + ৫ গ্রাম ট্রিকস্ প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে পাতার নিচের দিকে স্প্রে করা। এক কেজি আধাভাঙা নিমবীজ ১০ লিটার পানিতে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে উক্ত পানি পাতার নিচের দিকে স্প্রে করা। আক্রমণের হার অত্যন্ত বেশি হলে নিউরন ৫০০ ইসি অথবা টর্ক ৫৫০ এস সি ২ মি.লি. হারে প্রতি লিটার পানির সাথে স্প্রে করা যেতে পারে। মাকড়নাশক ওমাইট বা টলস্টার (প্রতি লিটার পানিতে ২ মি. লি. পরিমাণ) স্প্রে করা।
রোগবালাইঃ
এ্যানথ্রাকনোজের রোগের লক্ষণঃ
পাতায় বসানো দাগ হয়। ফলেও এ দাগ দেখা যায়। পাতা ঝরে পড়ে এবং ফল পচে যায়। পাতায় গোলাকৃতি দাগ দেখা যায়। কুয়াশায় পাতার পচন লক্ষ করা যায়। প্রথমে মধ্যাংশ একটু উঁচু ছোট কালো দাগ হয়। দাগ বাড়তে থাকে এবং পুরো ফলে কালো ছোপ ছোপ দাগ হয়ে ফল পচে যায়। উক্ত ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করলে পরের বছর চারা গজায় না। দমন ব্যবস্থা : ব্যাভিষ্টিন ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে গুলে ১৫ দিন পর পর স্প্রে করা। রোগমুক্ত ভালো বীজ ব্যবহার করতে হবে। ফল পুরোপুরি না পাকিয়ে তুলে নিতে হবে। ক্যাপসিকামের বীজ-ফলে অবশ্যই ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করে বীজ রোগমুক্ত রাখতে হবে।
ব্লাইট রোগের লক্ষণ: পাতায় দাগ হয়। পাতা ঝলসে যায়।
দমন ব্যবস্থা ৪ঃ
ব্যাভিষ্টিন ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে গুলে ১৫ দিন পর পর স্প্রে করা। রোগমুক্ত ভালো বীজ ব্যবহার করতে হবে।
উইল্টিং রোগের লক্ষণ : গাছ আস্তে আস্তে ঢলে পড়ে এবং মারা যায়।
দমন ব্যবস্থা ৫ঃ
আক্রান্ত গাছ উপড়ে ফেলা এবং জমিতে প্লাবন সেচ না দেয়া।
ফসল তোলা ও ফলনঃ মিষ্টি মরিচ সাধারণত পরিপক্ব সবুজ অবস্থায় লালচে হওয়ার আগেই মাঠ থেকে উঠানো হয়। সাধারণত সপ্তাহে একবার গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। ফল সংগ্রহের পর ঠান্ডা অথচ ছায়াযুক্ত স্থানে বাজারজাতকরণের পূর্ব পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হয়। উল্লেখ্য যে,ফসল সংগ্রহের সময় প্রতিটি ফলে সামান্য পরিমাণে বোটা রেখে দিতে হবে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা পলি হাউজের ভেতরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং ফার্টিগেশন পদ্ধতিতে সাফল্যজনকভাবে ক্যাপসিকাম উৎপাদন করেছেন। উওম ব্যবস্থা পনার মাধ্যমে চাষাবাদ করলে California Wonder জাতে হেক্টরপ্রতি ১০-১২ টন ফলন পাওয়া সম্ভব।
ব্রকলি চাষ ও পুষ্টিমান বা উপকারিতা
ব্রকলি ক্রসিফেরী গোত্রের অন্তর্ভুক্ত শীতকালিন সব্জি। এতে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফোলেট, আঁশ আছে। এতেphytonutrients থাকায় হৃদরোগ, বহুমূত্র এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। ব্রকলি জারণরোধী (antioxident) ভিটামিন এ এবং সি সরবরাহ করে কোষের ক্ষতি রোধ করে।
ব্রকলি দেখতে ফুলকপির মতো। রঙ হয় গাঢ় সবুজ ফুলকপির মতো দুধ সাদা নয়। ব্রকলী হচ্ছে অনেকটা ফুলকপির মতো দেখতে বেগুনি, হলুদ, পিংক ও সবুজ বর্ণের উদ্ভিদ; যার কুঁড়ি ও কাণ্ড সবজি হিসাবে খাওয়া হয়। পুষ্টি উপাদানের বিবেচনায় ব্রকলি উচ্চমানের সবজি। এটা ভিটামিন, খনিজ এবং এন্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। মানুষের শরীরের জন্য ব্রকলি একটি আদর্শ খাবার। এটা হার্টের অসুখ দুর করতে এবং ডায়াবেটিকস রোগ প্রশমনে খুবই সহায়ক।
প্রতি শতক জায়গায় ২৫-৩০ দিন বয়সের ২০০টি চারা রোপণ করে মাত্র ৫০-৬০ দিন পরই ৪০ মণ ব্রকলী উত্পাদন করা সম্ভব। বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় প্রতি কেজি ৪০-৪৫ টাকা দামে বিক্রি করে ৭ হাজার টাকা আয় করা যায়। অথচ শতক প্রতি জমি তৈরি, বীজ, সার ও অন্যান্যসহ সর্বোচ্চ মোট খরচ ১ হাজার টাকা। যা অন্যান্য ফসল চাষের তুলনায় লাভজনক। ব্রকলী সাধারণত দো-আঁশ ও এঁটেল দো-আঁশ মাটিতে ভাল হয়। মাটি ভালভাবে চাষ ও মই দিয়ে ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হয়। মধ্য ভাদ্র-মধ্য পৌষ এর মধ্য বীজ বপন ও চারা রোপণ করতে হয়। ২৫-৩০ দিন বয়সের চারা ৫০ সেন্টিমিটার দূরত্বে রোপণ করতে হয়। এরপর একর প্রতি গোবর ৬ টন, ইউরিয়া ১০০ কেজি, টি এস পি ৭০ কেজি ও পটাশ ৫৫ কেজি প্রয়োগ করতে হবে ।
ব্রকলির পুষ্টিমানঃ
ব্রকলি, কাঁচা (ভোজনযোগ্য)
| |
শক্তি
|
১৪১ কিজু (৩৪ kcal)
|
ভিটামিন সমূহ
| |
ভিটামিন “এ” সমতুল্য
|
(4%)
31 μg
|
বেটা ক্যারোটিন
|
(3%)
361 μg
|
লুটিন জিজানথেন
|
1403 μg
|
থায়ামিন (বি১)
|
(6%)
0.071 mg
|
(10%)
0.117 mg
| |
ন্যায়েসেন (বি৪)
|
(4%)
0.639 mg
|
প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫)
|
(11%)
0.573 mg
|
ভিটামিন বি৬
|
(13%)
0.175 mg
|
ফোলেট (বি৯)
|
(16%)
63 μg
|
ভিটামিন সি
|
(107%)
89.2 mg
|
ভিটামিন ই
|
(5%)
0.78 mg
|
ভিটামিন কে
|
(97%)
101.6 μg
|
চিহ্ন ধাতুসমুহ
| |
(10%)
0.21 mg
|
মাটি ও জলবায়ুঃ ফুলকপি ও ব্রোকলির জলবায়ু প্রায় একই রকম। তবে ব্রোকলির পারিপার্শ্বিক উপযোগিতার সীমা একটু বেশি বিস্তৃত। তবে ফুলকপির তুলনায় এটি উচ্চতাপমাত্রা ও খরা বেশি সহ্য করতে পারে। ব্রোকলি ১৫-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সবচেয়ে ভালো জন্মে। ব্রোকলি এপ্রিল মাসের পরেও ভালো ফলন দিতে পারে। জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ উর্বর দো-আঁশ উঁচু জমি এবং মাটির পিএইচ মান ৬-৭ হওয়া ব্রোকলি চাষের জন্য সর্বোত্তম।
জাতঃ আমাদের দেশে ব্রোকলির কোনো মুক্তায়িত জাত নেই। তবে বিভিন্ন বীজ কোম্পানি বিদেশ থেকে ব্রোকলির সাধারণ ও শঙ্কর উভয় প্রকার জাত আমদানি করে বাজারজাত করছে। উল্লেখযোগ্য জাতগুলো হচ্ছে- প্রিমিয়াম ক্রপ, গ্রিন কমেট, গ্রিন ডিউক, ক্রুসেডার, ডিসিক্কো, টপার-৪৩, ডান্ডি, ইতালিয়ান গ্রিন, সপ্রডিটিং টেক্সাস ১০৭, ওয়ালথাম ২৯, গ্রিন মাউন্টেইল, গ্রীন বাড।
বীজ বপনের সময়ঃ আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে বর্ষার পর পরই আগাম জমি প্রস্তুত করতে হয়। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসে (ভাদ্র থেকে কার্তিক) পর্যন্ত বীজতলায় ব্রোকলির বীজ বুনতে হয়।
বীজের পরিমাণঃ প্রতি হেক্টর আবাদের জন্য ১৫০ গ্রাম বীজ লাগে।
চারা উৎপাদনঃ পাতা পচা সার বা গোবর সার ১ ভাগ, বালু ১ ভাগ ও মাটি ২ ভাগ মিশিয়ে ব্রোকলির বীজতলা তৈরি করতে হয়। বীতলার মাপ হচ্ছে ১ মিটার প্রস্থ, ৩ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৫ সেমি. উচ্চতা। ১ হেক্টর জমিতে রোপণের জন্য এরূপ ২০টি বীজতলায় চারা তৈরির প্রয়োজন হবে। বীজতলার উপরিভাগে ৫ সেমি. দূরে দূরে সারি করে ১-২ সেমি. দূরে বীজ বপন করা হয়। বীজতলায় চারাকে রোদ বৃষ্টি হতে রক্ষার জন্য আচ্ছাদন বা চাটাইয়ের ব্যবস্থা রাখা উচিত। সকালে-বিকেলে সেচ দেয়ার পর একটি শক্ত কাঠি দ্বারা বীজতলা সাবধানে খুঁচিয়ে নিড়িয়ে দিতে হয়।
জমি তৈরিঃ সারাদিন রোদ পায় এমন জমি ব্রোকলি চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে। আবাদের জন্য গভীর চাষ দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। এরপর ২ সারিতে চারা রোপণের জন্য ১ মিটার চওড়া ও ১৫-২০ সেমি. উঁচু মিড়ি বা বেড তৈরি করতে হবে। সেচ ও পানি নিষ্কাশনের সুবিধার জন্য মিড়িতে চারা রোপণ করাই ভালো। মিড়ির দৈর্ঘ্য জমির সাইজ এবং কাজের সুবিধা বিবেচনা করে যত ইচ্ছা করা যেতে পারে। পাশাপাশি দুই মিড়ির মাঝখানে ৩০ সেমি. চওড়া এবং ১৫-২০ সেমি. গভীর নালা থাকবে। নালার মাটি তুলেই মিড়ি তৈরি করা হয়। সেচ দেয়া এবং পানি নিষ্কাশনের জন্য নালা অত্যন্ত জরুরি।
সার প্রয়োগঃ প্রতি হেক্টরে গোবর ১৫ হাজার কেজি, ইউরিয়া ২৫০ কেজি, এমপি ২০০ কেজি, টিএসপি ১৫০ কেজি এবং প্রতি চারায় পচা খৈল ৫০ গ্রাম হারে প্রয়োগ করতে হয়।
চারা রোপণঃ বীজতলায় চারা ৫-৬টি পাতা হলে প্রধান জমিতে রোপণ করতে হয়। সে সময় চারার উচ্চতা ৮-১০ সেমি. হয়। তবে ৪-৬ সপ্তাহ বয়সের চারা রোপণ সবচেয়ে উত্তম। ৬০ সেমি. ব্যবধানে সারি করে সারিতে ৫০ সেমি. দূরত্বে চারা লাগানো হয়। ভালা ফলনের জন্য চারার বয়স কম হওয়া বাঞ্ছনীয়।
পরবর্তী পরিচর্যাঃ রোপণের পর প্রথম ৪-৫ দিন পর্যন্ত এক দিন পর পর সেচ দিতে হবে। পরবর্তীতে ৮-১০ দিন অন্তর বা প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ দিলেই চলবে। সেচ পরবর্তী জমিতে ‘জো’ আসলে ব্রোকলির বৃদ্ধির জন্য মাটির চটা ভেঙে দিতে হবে এবং জমি আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। সারের উপরি প্রয়োগ যথাসময়ে করতে হবে। উলেখ্য, সারের উপরি প্রয়োগের পর অবশ্যই জমিতে সেচ দিতে হবে। এ ছাড়া পানি সেচ ও নিষ্কাশনের জন্য বেড সর্বদা পরিষ্কার রাখতে হবে।
ফসল সংগ্রহ ও ফলনঃ ব্রোকলি রোপণের ৬০-৭০ দিনের মধ্যে অগ্রীম পুষ্পমঞ্জরি সংগ্রহের উপযুক্ত সময়। ধারালো ছুরি দ্বারা তিন ইঞ্চি কাণ্ডসহ পুষ্পমঞ্জরি কেটে সংগ্রহ করতে হয়। এভাবে একই জমি থেকে ১ মাসব্যাপী কয়েকবার ব্রোকলির উৎপাদন পাওয়া যায়। পুষ্পমঞ্জরির রঙ ফ্যাকাশে বা ঢিলা হওয়ার আগে মোটামুটি জমাটবাঁধা অবস্থায় সংগ্রহ করা উচিত। এর বর্ণ তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায় বিধায় পর্যায়ক্রমে সংগ্রহ করে খাওয়া বা দ্রুত বাজারজাত করা উচিত। এজন্য অনেক দেশে পলিথিনের প্যাকেটে একে বাজারজাত করা হয়। ব্রোকলির ফলন প্রতি হেক্টরে ১০-১৫ টন।
পোকামাকড় ও রোগবালাই ব্যবস্থাপনাঃ সরুই পোকা বা ডায়মন্ড ব্যাক মথ : এ পোকার আক্রমণে কচি পাতা, ডগা ও কপি খেয়ে নষ্ট করে। পাতার ওপরের ত্বক বা সবুজ অংশ কুরে কুরে খাওয়ার ফলে সেসব অংশ ঝাঁঝরা হয়ে যায়। আক্রান্ত পাতা সবুজ রঙবিহীন জালের মতো দেখায়। ব্যাপক আক্রমণে পাতা শুকিয়ে মরে যায়। কচি গাছের বর্ধনশীল অংশে এ পোকার আক্রমণ বেশি পরিলক্ষিত হয। আক্রান্ত ব্রোকলি খাওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে যায়। এদের ব্যাপক আক্রমণে ব্রকলি উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পেতে পারে।
দমন ব্যবস্থাঃ ফসল সংগ্রহের পর ফসলের অবশিষ্টাংশ পুড়য়ে ফেলা এবং পরে জমি ভালো করে চাষ করা। আক্রান্ত পাতার পোকা ২-৩ বার হাতে ধরে মেরে ফেললে এ পোকা অনেকাংশে দমন করা যায়। পিঁপড়া এবং মাকড়সা এ পোকার কীড়া খায়। বহু রকমের বোলতা যেমন ট্রাইকোগ্রামা, কোটেসিস ইত্যাদি এ পোকার ডিম কীড়াকে ধ্বংস করে ফেলে। ব্যাসিলাস ফুরিনাজিয়েনসিস (বিটি) প্রয়োগ করে এ পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। জমি জরিপ করে যদি প্রয়োজন হয় তখন সঠিক নিয়মে অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
জাব পোকাঃ জাব পোকা একটি অন্যতম প্রধান ক্ষতিকারক পোকা। অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয় অবস্থাতেই দলবদ্ধভাবে গাছের নতুন ডগা, পাতা, ফুল, ফল ইত্যাদির রস চুষে খায়। ফলে পাতা বিকৃত হয়ে যায়, বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও প্রায়শ নিচের দিকে কুঁকড়ানো দেখায়। জাব পোকা শরীরের পেছন দিকে অবস্থিত দুটি নল দিয়ে মধুর মতো এক প্রকার রস নিঃসৃত করে। এ রসে পাতা ও কাণ্ডে সুটিমোল্ড নামক এক প্রকার কলো রঙের ছত্রাক জন্মায়। এর ফলে গাছের সবুজ অংশ ঢেকে যায় এবং সালোকসংশে ষণ ক্রিয়া বিঘ্নিত হয়। মেঘলা, কুয়াশাচ্ছন্ন এবং ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় জাব পোকার বংশ বৃদ্ধি বেশি হয়। তবে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হলে এদের সংখ্যা কমে যায়।
দমন ব্যবস্থাঃ প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত পাতা ও ডগার জাব পোকা হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলা যায়। নিম বীজের দ্রবণ (১ কেজি পরিমাণ অর্ধভাঙা নিমবীজ ১০ লিটার পানিতে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে) বা সাবানঘোলা পানি (প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২ চা চামচ গুঁড়া সাবান মেশাতে হবে) সেপ্র করেও এ পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কমানো যায়। লেডিবার্ড বিটলের পূর্ণাঙ্গ পোকা ও কীড়া এবং সিরফিড ফ্লাইয়ের কীড়া জাব পেকা খেয়ে প্রাকৃতিকভাবে দমন করে। সুতরাং উপরোক্ত বন্ধু পোকাগুলো সংরক্ষণ করলে এ পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কম হয়। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে শুধু আক্রান্ত স্থানগুলো কীটনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিষক্রিয়াসম্পন্ন কীটনাশক, যেমন- ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি হারে মিশিয়ে সেপ্র করতে হবে।
কাটুই পোকাঃ চারা অবস্থায় কাটুই পোকার আক্রমণে ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়ে থাকে। এ পোকা সাধারণত চারা গাছের ক্ষতি করে থাকে। দিনের বেলা কাটুই পোকার কীড়া মাটির ফাটলে, মাটির ঢেলায় এবং আবর্জনার মধ্যে লুকিয়ে থাকে। পোকা রাতের বেলা বের হয়ে ব্রোকলির চারা গাছ কেটে ফেলে। ভোর বেলা ক্ষেতে কাটা গাছের কাছে মাটি খুঁড়লে কাটুই পোকার কীড়া দেখতে পাওয়া যায়। কাটুই পোকার ব্যাপক আক্রমণে জমিতে ব্রোকলির গাছের সংখ্যা কমে যায় বলে ফলনও কম হয়।
দমন ব্যবস্থাঃ পোকা দমনের জন্য ভোরে কাটা চারার গোড়ার মাটি খুঁড়ে কীড়াগুলো মেরে ফেলা উচিত। টর্চ বা হারিকেন নিয়ে রাতে কাটুইপোকার কীড়া সংগ্রহ করে মেরে ফেলা যায়। ক্ষেতে সেচ দিলে মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা কীড়া মাটির ওপরে উঠে আসে। ফলে সহজে পাখি এদের ধরে খায় এবং হাত দিয়ে মেরে ফেলা যায়। বিষটোপ দিয়ে এ পোকা দমন করা যায়। বিষটোপ হিসেবে শতাংশ প্রতি ২ গ্রাম সেভিন/কার্বোরিল ৮৫ ডবলিউপি অথবা পাদান ৫০ এসপি, ৪০০ গ্রাম গম বা ধানের কুঁড়ার সাথে পরিমাণমতো পানিতে মিশিয়ে এমন একটি বিষটোপ তৈরি করতে হবে যা হাত দিয়ে ছিটানো যায়। এ বিষটোপ সন্ধ্যায় আক্রান্ত ক্ষেতে চারা গাছের গোড়ায় ছিটিয়ে প্রয়োগ করলে কাটুই পোকার কীড়া দমন সহজ হয়। আক্রমণ বেশি হলে অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
রোগবালাই
দাগ রোগঃ এ রোগ হলে পাতায় বাদামি রঙের চক্রাকার দাগ পড়ে। দাগগুলো অসম আকারের হয়ে থাকে। দাগ অনেকটা চাক চাক আকারে পর পর সাজানো কতগুলো বলয়ের মতো দেখা যায়। অধিক আক্রান্ত পাতা শুকিয়ে যায়। ফলে অসংখ্য ছোট ছোট কালচে দাগ দেখা যায়। আক্রান্ত ফসলের বীজ পরিপুষ্ট না হয়ে চিটা হয় এবং ফলন কমে যায়।
দাগ রোগঃ এ রোগ হলে পাতায় বাদামি রঙের চক্রাকার দাগ পড়ে। দাগগুলো অসম আকারের হয়ে থাকে। দাগ অনেকটা চাক চাক আকারে পর পর সাজানো কতগুলো বলয়ের মতো দেখা যায়। অধিক আক্রান্ত পাতা শুকিয়ে যায়। ফলে অসংখ্য ছোট ছোট কালচে দাগ দেখা যায়। আক্রান্ত ফসলের বীজ পরিপুষ্ট না হয়ে চিটা হয় এবং ফলন কমে যায়।
দমন ব্যবস্থাঃ রোগ দমনের জন্য সুষম সার ও নিয়মিত সেচের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। উপযুক্ত শস্য পর্যায় করা। সঠিক দূরত্বে চারা রোপণ করতে হবে। অনুমোদিত ছত্রাকনাশক যেমন- ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম রোভরাল মিশিয়ে গাছের ১০-১২ দিন অন্তর সেপ্র করা উচিত।
No comments:
Post a Comment